Monday, October 5, 2015

http://lyksoomu.com/1CBu4



ভূমি রেজিস্ট্রেশন


জমি রেজিস্ট্রেশন কনটেন্টটিতে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক কিনা, কোন কোন দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, রেজিস্ট্রেশন করতে কী কী প্রয়োজন, বিভিন্ন প্রকার দলিল রেজিস্ট্রেশনের ফি, কোন কর কে দিবে সেই সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে ।


জমি রেজিস্ট্রেশন 




মোহাম্মেদ  রুবেল একজন গরীব কৃষক। অনেক কষ্টে সে কিছু টাকা জমিয়ে ১০ কাঠা জমি কেনে। কিন্তু সে জানে না কিভাবে জমি রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। শহরে তার ছেলে মাসুদ কলেজে পড়ে। সে গ্রামে আসলে তার বাবাকে বলে যে তাদের নতুন কেনা জমি রেজিস্ট্রেশন করা প্রয়োজন। তাই সে তার বাবাকে নিয়ে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যায় পরামর্শের জন্য। সাব রেজিস্ট্রিার তাদেরকে জমি রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানায়।

মোহাম্মেদ  রুবেল  : জমি রেজিস্ট্রেশন করা কি জরুরি ?

সাব রেজিস্ট্রার : বাংলাদেশে অনেক মানুষই ভূমি আইন সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না। ফলে তারা জমি নিয়ে নানা ধরনের প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হন। জমি রেজিস্ট্রেশন করা খুবই জরুরি।

মোহাম্মেদ  রুবেল :  জমি রেজিস্ট্রেশন করা কি বাধ্যতামূলক ?

সাব রেজিস্ট্রার : রেজিস্ট্রেশন আইন ২০০৪ (সংশোধিত) অনুযায়ী, সকল দলিল রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক। আইন অনুযায়ী দলিল রেজিস্ট্রি করা হলে মালিকানা নিয়ে বিরোধ এড়ানো যায়। এছাড়া জমি রেজিস্ট্রি করা থাকলে পরবর্তীতে বিক্রি, দান, উইল করতে সহজ হয়। স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় দলিল অবশ্যই লিখিত হতে হবে।

মোহাম্মেদ  রুবেল : দলিলের ক্ষেত্রে কোন কোন দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে হয় ?

সাব রেজিস্ট্রার : বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। যেমন :
  • বিক্রয় দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে।
  • জমি ক্রয় করার পূর্বে বায়না দলিল সম্পাদন করলে তা ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশনের জন্য উপস্থাপন করতে হবে। রেজিস্ট্রি  ছাড়া বায়না দলিলের আইনগত মূল্য নেই।
  • বায়না চুক্তি প্রবলের জন্য ফৌজদারি আদালতে প্রতারণার অভিযোগ এনে দন্ডবিধির ৪২০ ধারায় মামলা করা যায়।
  • বায়না দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ হতে ১ বছরের মধ্যে বিক্রয় দলিল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করতে হবে।
  • হেবা বা দানকৃত সম্পত্তির দলিলও রেজিস্ট্রি করতে হবে।
  • বন্ধককৃত জমির দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে।
  • কোন ভূমি সম্পত্তি মালিকের মৃত্যু হলে তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বাটোয়ারা করা এবং উক্ত বাটোয়ারা বা আপোষ বণ্টন নামা রেজিস্ট্রি করতে হবে।

মোহাম্মেদ  রুবেল : রেজিস্ট্রেশন করার জন্য কি কি প্রয়োজন হয় ?

সাব রেজিস্ট্রার : রেজিস্ট্রেশন করার জন্য কিছু তথ্যের প্রয়োজন হয়। 
  • জমি রেজিস্ট্রি করতে বিক্রিত জমির পূর্ণ বিবরণ উল্লেখ থাকতে হবে।
  • দলিলে দাতা-গ্রহীতার পিতা-মাতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা এবং সাম্প্রতিক ছবি সংযুক্ত করতে হবে।
  • যিনি জমি বিক্রয় করবেন তার নামে অবশ্যই নামজারী (মিউটেশন) থাকতে হবে (উত্তরাধিকার ছাড়া)।
  • বিগত ২৫ বছরের মালিকানা সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও সম্পত্তি প্রাপ্তির ধারাবাহিক ইতিহাস লেখা থাকতে হবে।
  • সম্পত্তির প্রকৃত মূল্য, সম্পত্তির চারদিকের সীমানা, নকশা দলিলে থাকতে হবে।
  • দাতা কর্তৃক বিক্রিত সম্পত্তি অন্য কারো কাছে বিক্রি করেনি মর্মে হলফনামা থাকতে হবে।
  • জমির পর্চাসমূহে (সি.এস, এস. এ, আর.এস) মালিকানার ধারাবাহিকতা থাকতে হবে।
  • বায়া দলিল (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে) থাকতে হবে।

  •  
মোহাম্মেদ  রুবেল বিভিন্ন প্রকার দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য কি পরিমাণ ফিসের প্রয়োজন হয় ?

সাব রেজিস্ট্রার দলিল রেজিস্ট্রি করা হয় রেজিস্ট্রেশন আইন,স্ট্যাম্প আইন, আয়কর আইন, অর্থ আইন ও রাজস্ব সংক্রান্ত বিধি এবং পরিপত্রের আলোকে। সকল দলিলের রেজিস্ট্রি ফিস সমান নয়। সরকার বিভিন্ন সময় সমসাময়িক বিবেচনা অনুযায়ী রেজিস্ট্রি ফিস নির্ধারণ করে থাকেন।

মোহাম্মেদ  রুবেল : কর দেয়ার ক্ষেত্রে কি নিয়ম ?

সাব রেজিস্ট্রার ভ্যাট ও উৎস কর সব সময়ই জমির বিক্রেতা প্রদান করবে। আয়কর আইন মতে, এই দুই ধরণের কর বিক্রেতার আয়ের ওপর ধার্য হয়। এই কর বিক্রেতার নামে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। উৎস কর ও ভ্যাট ছাড়া অন্যান্য সকল ধরণের কর জমির ক্রেতাকে পরিশোধ করতে হবে।
সাব রেজিস্ট্রারের পরামর্শে ফজর আলী তার জমি রেজিস্ট্রি করে। এর ফলে তিনি জমি বেদখল হবার জটিলতা থেকে রক্ষা পায়।

সচরাচর জিজ্ঞাসা 
প্রশ্ন-১. জমি রেজিস্ট্রেশন কোথায় করা হয়? 
উত্তর. প্রতিটি উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিস আছে। সেখানে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়।
প্রশ্ন-২. জমি ক্রয় করলে যাচাই বাছাইয়ের জন্য কোথায় যেতে হবে? 
উত্তর: ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও উপজেলা ভূমি অফিসে বিক্রিত জমির তফসিল নিয়ে জমিটি আগে বিক্রি হয়েছে কিনা, আগে অন্য কারো নামে নামজারী আছে কিনা, বিক্রয়ে উল্লেখিত দাগ, খতিয়ান, নকশা ঠিক আছে কিনা এবং সর্বোপরি সরেজমিনে বিক্রিত জমি আছে কিনা তার খোঁজ পাওয়া যাবে। প্রয়োজনে ভূমি অফিস থেকে সার্ভেয়ার (আমিন) নিয়ে জমি মেপে জমি ক্রয় করতে হবে।
প্রশ্ন.-৩. জমি বিক্রয় করতে জমি বিক্রেতার নামে নামজারী কি জরুরি? 
উত্তর: উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি ছাড়া সকল সম্পত্তি বিক্রয় করার ক্ষেত্রে দাতার নামে নামজারী বাধ্যতামূলক।
প্রশ্ন-৪. মৌখিক দান কি আইন সম্মত? 
উত্তর: ২০০৪ সালের রেজিস্ট্রেশন আইন সংশোধনের পর মৌখিক দান বৈধ নয়



তথ্যসূত্র
  1. The Registration Act, 1908 (Amendment in 2004).
  2. Transfer of Property Act, 1882 (Amendment in 2004).
  3. The Specific Relief Act, 1877 (Amendment in 2004).
  4. The Limitation Act, 1908 (Amendment in 2004).
  5. The State Acquisition and Tenancy Act, 1950 (Amendment in 2004).
  6. ইসলাম. মো: মতিউল, জমি জমার আইন ও আলোচনা, পৃষ্ঠা: ৪১, ষষ্ঠ সংস্করণ: জানুয়ারি ২০০৬।
  7. খান, মো: নজরুল ইসলাম, ভূমি আইনের সহজ পাঠ, পৃষ্ঠা: ৩৩৮, পুন:মুদ্রন-এপ্রিল ২০০৮।

ছবির স্বত্ত্ব 
  1. বারসিক


    জমি রেজিস্ট্রেশন : ব্যাখ্যা 

    ব্যাখ্যা : ১
    ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ী, কোন জমি বা ভূখন্ড হস্তান্তর করতে হলে বা মালিকানা পরিবর্তন করতে হলে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নির্ধারিত ফরমে ক্রেতা-বিক্রেতার চাহিদা মাফিক তথ্যাবলী ও দলিলাদি উল্লেখ করে যে নিবন্ধন করা হয় এবং যাতে জমির পরিচিতি উল্লেখ থাকে যা দলিলে লেখা হয়, এ ধরণের দলিল সাব-রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে নিবন্ধিত করাকে রেজিস্ট্রি বলে। যে ক্ষেত্রে দলিল দাতা অথবা গ্রহীতা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে পারেন না সে ক্ষেত্রে যে কোন পক্ষের চাহিদা মোতাবেক সাব-রেজিস্ট্রার কমিশনের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রি করতে পারেন।
    ব্যাখ্যা : 2
    •  রেজিস্ট্রেশন আইন  (সংশোধিত ২০০৪) ৭৮ এ অনুযায়ী স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের বায়না দলিল ফিঃ 
      
    হেবা দলিলের রেজিস্ট্রি ফিঃ
    ক. বিক্রয়যোগ্য সম্পত্তির বিক্রয়মূল্য ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হলে রেজিস্ট্রি ফি হবে ৫০০ টাকা।
    খ. বিক্রয়যোগ্য সম্পত্তির বিক্রয়মূল্য ৫ লাখ টাকার বেশি এবং ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত হলে রেজিস্ট্রি ফি হবে ১০০০ টাকা।
    গ. বিক্রয়যোগ্য সম্পত্তির বিক্রয়মূল্য ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে রেজিস্ট্রি ফি হবে ২০০০ টাকা।
    • হেবা দলিলের রেজিস্ট্রি ফিঃ
    মুসলিম পারসোনাল ল’ অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা, সন্তান, দাদা-দাদী, নাতি-নাতনী, সহোদর ভাই-ভাই, সহোদর বোন-বোন, সহোদর ভাই-বোনের মধ্যে হেবা বা দান দলিলের রেজিস্ট্রি ফি মাত্র ১০০ টাকা।
    • বন্ধকী দলিল রেজিস্ট্রি ফিঃ 
    সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ এর ৫৯ ধারা মতে বন্ধকী দলিলের রেজিস্ট্রেশন ফি হলো-
    ক. বন্ধকী সম্পত্তির অর্থের পরিমাণ ৫ লাখ টাকার বেশি না হলে অর্থের ১%, তবে ২০০ টাকার কম নয় এবং ৫০০ টাকার বেশি নয়। যেমন: কোন সম্পত্তির পরিমাণ বিশ হাজার টাকা হলে ১% হিসেবে রেজিস্ট্রেশন ফি ২০০ টাকা, কিন্তু কোন সম্পত্তির পরিমাণ দশ হাজার টাকা হলে ১% হিসেবে রেজিস্ট্রেশন ফি ১০০ টাকা। আইনে সর্বনিম্ন ফি ২০০ টাকা হওয়ায় দশ হাজার টাকা পরিমাণের বন্ধকী জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন ফি ২০০ টাকা-ই হবে (১০০ টাকা নয়)। একইভাবে চার লক্ষ টাকা পরিমাণের জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন ফি ১% হিসেবে ৪০০০ টাকা কিন্তু আসলে ফি দিতে হবে ৫০০ টাকা কেননা আইনে সর্বোচ্চ ফি ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা।

    খ. বন্ধকী সম্পত্তির অর্থের পরিমাণ ৫ লাখ টাকার বেশি এবং ২০ লাখ টাকার বেশি না হলে অর্থের ০.২৫%, তবে ১৫০০ টাকার কম নয় এবং ২০০০ টাকার বেশি নয়।
    গ. বন্ধকী সম্পত্তির অর্থের পরিমাণ ২০ লাখ টাকার বেশি হলে বন্ধকী অর্থের ০.১০% টাকা হারে,তবে ৩০০০ টাকার কম নয় এবং ৫০০০ টাকার বেশি হবে না।
    এ কথা মনে রাখতে রেজিস্ট্রেশন আইন ২০০৪ এর সংশোধন অনুযায়ী বন্ধকী সম্পত্তি গ্রহীতার লিখিত সম্মতি ছাড়া কোন বন্ধক দেয়া যাবে না এবং বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রি করা যাবে না।
    • কবলা বন্ধকী দলিল রেজিস্ট্রি ফিঃ 
    ক. স্ট্যাম্প শুল্ক ক্রয়মূল্যের....................................................................................৫%
    খ. রেজিস্ট্রি ফি ১-২৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয়মূল্যের জন্য টাকা...........................................৫০/-
    গ. রেজিস্ট্রি ফি ২৫০১-৪০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয়মূল্যের জন্য ............................................২%
    ঘ. রেজিস্ট্রি ফি ৪০০১ হতে তদুর্ধ্ব বিক্রয়মূল্যের জন্য......................................................২.৫০%
    ঙ. হলফনামা ফি টাকা..........................................................................................৫০/-
    চ. পৌরকর: সিটি কর্পোরেশন/পৌর/টাউন/ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকার জন্য.............................১%
    ছ. উৎস কর: সিটি কর্পোরেশন/পৌর/টাউন/ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকার জন্য............................৫%
    জ. সিটি কর্পোরেশন/পৌর/টাউন/ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকা বর্হিভূত জমি বিক্রির
    ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ কর (১%+১%).................................................২%
    ঝ. সিটি কর্পোরেশন/পৌর/টাউন/ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বর্হিভূত এলাকার ১ লাখ
    টাকার অধিক মূল্যের অকৃষি জমি বিক্রির ক্ষেত্রে বিক্রেতার উৎস কর.....................................৫%
    ঞ. মওকুফ: সিটি কর্পোরেশন/পৌর/টাউন/ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকার বাইরের ১ লাখ টাকার নিচে অকৃষি জমি ও অন্যান্য কৃষি/ভিটি/নামা ইত্যাদি) জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পৌর কর ও উৎস কর দিতে হবে না। কিন্তু জমি বিক্রির মূল্য ১ লাখ টাকার বেশি হলে, জমিটি অকৃষি হলে সে জমি পৌর এলাকার বাইরে হলেও তার জন্য ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে.........................................................................৫%

    No comments:

    Post a Comment